পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ, ছবি এবং আবেদন ফরম লাগে। অনলাইনে আবেদন জমা দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়। পাসপোর্ট করা এখন অনেক সহজ।
অনলাইনে আবেদন জমা দিয়ে শুরু করতে হয় প্রক্রিয়া। প্রথমে, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধন সনদের কপি রাখতে হবে। এ ছাড়া, নাগরিকত্ব সনদ এবং কয়েকটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়।
এরপর নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পর নির্দিষ্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হয়। সব তথ্য সঠিক হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। সহজ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট তৈরি এখন খুবই সোজা।
পাসপোর্ট কি?
পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ নথি। এটি আপনার জাতীয়তার প্রমাণ বহন করে। বিদেশে ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট অপরিহার্য।
প্রয়োজনীয়তা
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- জন্ম সনদ
- চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- আবেদন ফি
- ঠিকানা প্রমাণ
উপকারিতা
- বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি মেলে
- ব্যবসায়িক সুযোগ বাড়ে
- আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ
- বৈশ্বিক চাকরির সুযোগ
- পরিবারিক ভ্রমণ সহজ হয়
পাসপোর্ট করার ধাপসমূহ
পাসপোর্ট করতে গেলে কিছু ধাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন। সঠিক নিয়ম মেনে চললে সহজেই পাসপোর্ট পাওয়া যায়। নিচে পাসপোর্ট করার ধাপসমূহ বিস্তারিত দেওয়া হলো।
অনলাইন আবেদন
প্রথমে অনলাইন আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার জন্য পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘নতুন আবেদন’ অপশনে ক্লিক করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- ব্যক্তিগত তথ্য যেমন নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি প্রদান করুন।
- পাসপোর্ট ফি অনলাইনে পরিশোধ করুন।
আবেদন ফর্ম পূরণ
অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হলে আবেদন ফর্ম পূরণ করার ধাপ শুরু হয়। এই ফর্মটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে।
- ফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংযুক্ত করুন।
- স্বাক্ষর এবং তারিখ সঠিক জায়গায় দিন।
- ফর্মটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই পাসপোর্ট আবেদন করা যায়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
পাসপোর্ট করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা দরকার। এই কাগজপত্রগুলো সঠিকভাবে জমা না দিলে, পাসপোর্ট তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যেতে পারে। আসুন জেনে নিই, পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন।
জাতীয় পরিচয়পত্র
পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই দরকার। এটি আপনার পরিচয় প্রমাণের প্রধান দলিল।
- জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকলে তা সংশোধন করুন।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিন।
জন্ম সনদ
জন্ম সনদও একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটি আপনার জন্ম তারিখ প্রমাণ করে।
দলিল | বর্ণনা |
---|---|
জন্ম সনদ | আপনার সঠিক জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান প্রমাণ করে। |
ছবি
পাসপোর্ট করতে ছবি জমা দিতে হবে। ছবি অবশ্যই নির্ধারিত মাপের হতে হবে।
- ছবি ৩৫mm x ৪৫mm মাপের হতে হবে।
- ছবি রঙিন এবং পরিষ্কার হতে হবে।
ফি এবং চার্জ
পাসপোর্ট করতে হলে ফি এবং চার্জ সম্পর্কে জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরণের ফি এবং চার্জ আছে যা আপনাকে পাসপোর্ট করতে দিতে হবে। এখানে নিয়মিত ফি এবং জরুরী ফি সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো।
নিয়মিত ফি
নিয়মিত ফি হলো সাধারণ ফি যা পাসপোর্ট করতে দেওয়া হয়। এই ফি কিছু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য নেওয়া হয়। নিয়মিত ফি সাধারণত কম থাকে। নিচে নিয়মিত ফি সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
পাসপোর্টের ধরন | ফি (টাকা) |
---|---|
নতুন পাসপোর্ট (৫ বছর) | ৩,৪৫০ |
নতুন পাসপোর্ট (১০ বছর) | ৬,৯০০ |
পুনঃনবীকরণ (৫ বছর) | ৩,৪৫০ |
পুনঃনবীকরণ (১০ বছর) | ৬,৯০০ |
জরুরী ফি
যদি আপনার দ্রুত পাসপোর্ট প্রয়োজন হয় তাহলে আপনাকে জরুরী ফি দিতে হবে। এই ফি সাধারণত নিয়মিত ফি এর চেয়ে বেশি হয়। জরুরী ফি দিয়ে আপনি কম সময়ে পাসপোর্ট পেতে পারেন। নিচে জরুরী ফি সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
পাসপোর্টের ধরন | ফি (টাকা) |
---|---|
জরুরী পাসপোর্ট (৫ বছর) | ৬,৯০০ |
জরুরী পাসপোর্ট (১০ বছর) | ১৩,৮০০ |
পুনঃনবীকরণ (জরুরী) (৫ বছর) | ৬,৯০০ |
পুনঃনবীকরণ (জরুরী) (১০ বছর) | ১৩,৮০০ |
আবেদন প্রক্রিয়ার সময়কাল
পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়ার সময়কাল সম্পর্কে জানাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কখন পাসপোর্ট পাবেন তা নির্ভর করে আবেদন প্রক্রিয়ার উপর। আবেদন প্রক্রিয়ার সময়কাল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এখানে আমরা সাধারণ সময় এবং জরুরী সময়ের ভিত্তিতে সময়কাল বিশ্লেষণ করব।
সাধারণ সময়
সাধারণ সময়ে পাসপোর্ট পেতে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ কার্যদিবস লাগে। আবেদন জমা দেওয়ার পর বিভিন্ন ধাপে যাচাই হয়।
- আবেদন যাচাই
- দলিল যাচাই
- পুলিশ যাচাই
- পাসপোর্ট মুদ্রণ
এই ধাপগুলি সম্পন্ন হতে সাধারণত ১৫-২০ কার্যদিবস সময় লাগে।
জরুরী সময়
জরুরী সময়ে পাসপোর্ট পেতে ৭ থেকে ১০ কার্যদিবস লাগে। জরুরী প্রক্রিয়ায় দ্রুত যাচাই সম্পন্ন হয়।
- জরুরী আবেদন যাচাই
- দ্রুত দলিল যাচাই
- জরুরী পুলিশ যাচাই
- দ্রুত পাসপোর্ট মুদ্রণ
অনলাইন আবেদন কিভাবে করবেন?
পাসপোর্ট করতে এখন আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই। অনলাইনে আবেদন করলেই পেয়ে যাবেন আপনার পাসপোর্ট। চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইন আবেদন করার সহজ উপায়।
ওয়েবসাইট লিঙ্ক
পাসপোর্টের অনলাইন আবেদনের জন্য প্রথমে এই ওয়েবসাইটে যান। এই ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশ সরকারের পাসপোর্ট ও অভিবাসন অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।
ধাপে ধাপে নির্দেশনা
- অ্যাকাউন্ট তৈরি: প্রথমে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। আপনার ইমেইল ও মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান: অ্যাকাউন্ট তৈরি হওয়ার পর, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করুন। যেমন নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি।
- ডকুমেন্ট আপলোড: আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করুন। যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ, ছবি ইত্যাদি।
- ফি পরিশোধ: অনলাইনে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করুন।
- আবেদন সাবমিট: সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ ও যাচাই করার পর আবেদন সাবমিট করুন।
- আবেদন প্রিন্ট: আবেদন সাবমিট করার পর আবেদন ফর্ম প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করুন।
- সাক্ষাৎকারের তারিখ: আবেদন প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষাৎকারের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করুন।
পাসপোর্ট সংগ্রহ প্রক্রিয়া
পাসপোর্ট সংগ্রহ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং দ্রুত। আপনি দুইটি পদ্ধতিতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারেন। নিচে বিস্তারিতভাবে প্রতিটি পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
অফিস থেকে সংগ্রহ
অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে চাইলে নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
- অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ: প্রথমে অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- আবেদন ফি পরিশোধ: পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করুন। এটি ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা যাবে।
- সাক্ষাৎকার ও বায়োমেট্রিক: নির্ধারিত অফিসে সাক্ষাৎকার ও বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করুন।
- পাসপোর্ট সংগ্রহ: নির্ধারিত সময়ে অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
কুরিয়ার সার্ভিস
কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- অনলাইন আবেদন ফর্ম পূরণ: প্রথমে অনলাইন পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
- আবেদন ফি পরিশোধ: ফি পরিশোধ করুন। এটি ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা যাবে।
- সাক্ষাৎকার ও বায়োমেট্রিক: নির্ধারিত অফিসে সাক্ষাৎকার ও বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করুন।
- কুরিয়ার সার্ভিস নির্বাচন: কুরিয়ার সার্ভিস নির্বাচন করুন এবং ঠিকানা প্রদান করুন।
- পাসপোর্ট ডেলিভারি: নির্ধারিত ঠিকানায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন।
উপরের ধাপগুলি অনুসরণ করে খুব সহজেই আপনি আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
Credit: m.facebook.com
পাসপোর্ট নবায়ন
পাসপোর্ট নবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। অনেক সময় পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তখন এটি নবায়ন করা প্রয়োজন। নিচে পাসপোর্ট নবায়নের প্রয়োজনীয়তা ও নতুন ফি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নবায়নের প্রয়োজনীয়তা
- পুরানো পাসপোর্ট: পুরানো পাসপোর্টের কপি জমা দিতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হবে।
- ছবি: পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
- আবেদন ফর্ম: নবায়নের জন্য আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- বৈধ ঠিকানার প্রমাণপত্র: বৈধ ঠিকানার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
নতুন ফি
পাসপোর্ট প্রকার | ফি |
---|---|
নিয়মিত পাসপোর্ট | ৩,৪৫০ টাকা |
তাত্ক্ষণিক পাসপোর্ট | ৬,৯০০ টাকা |
পাসপোর্ট নবায়ন প্রক্রিয়ায় এই তথ্যগুলো জানা জরুরি। সঠিক তথ্য জমা দিলে কাজ সহজ হয়।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ:
পাসপোর্ট করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে?
- পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম সনদ, ঠিকানা প্রমাণপত্র এবং ছবি লাগে। এছাড়া পূর্বের পাসপোর্ট থাকলে সেটিও জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট ফি কত?
- পাসপোর্ট ফি নির্ভর করে পাসপোর্টের ধরণ ও প্রক্রিয়াকরণের সময়ের উপর। সাধারণত ৩৪৫০ টাকা থেকে শুরু হয়।
কতদিনে পাসপোর্ট তৈরি হয়?
- সাধারণত পাসপোর্ট তৈরি হতে ১৫ থেকে ৩০ কার্যদিবস লাগে। ত্বরিত পাসপোর্ট ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পাওয়া যায়।
পাসপোর্টের মেয়াদ কতদিন?
- বাংলাদেশি পাসপোর্টের মেয়াদ সাধারণত ৫ বছর। মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় আবেদন করতে হয়।
Conclusion
পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো এখন আপনার জানা। সহজ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে পাসপোর্ট পাওয়া সহজ হবে। সব কাগজপত্র ঠিকঠাক রাখুন। অনলাইনে আবেদন করুন এবং সময়মতো ফি পরিশোধ করুন। যাত্রার শুরুতে আপনার পাসপোর্ট একটি অপরিহার্য দলিল। আমাদের নির্দেশিকা অনুসরণ করে সহজেই পাসপোর্ট তৈরি করুন।